৪ অক্টোবর, শুক্রবার . বাংলাদেশ বর্ডার ক্রস করে ৩০,০০০ ফিট উচ্চতায় প্লেইন নেপাল প্রবেশ করছে . ছিলাম ডান পাশে . হঠাৎ খেয়াল করলাম দূরে কিছু একটা মেঘ ভেদ করে আরো উপরে উঠতে চাইছে . চোখে পরতেই ফ্লাইট ক্রু এনাউন্স করলো, “Ladies and Gentlemen, look at your right you will see the Mt Everest standing at a height of 8848 meters, the highest point on earth” . চোখ ফেরাতে পারিনি কিছুক্ষনের জন্য . পৃথিবীর ছাদ বলে কথা.
কিন্তু অবাক হলাম নেপাল নেমে . সব কিছুতেই এরা বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে . অবশ্য হবে না কেন. শুধুমাত্র টুরিজম দিয়েই একটা দেশ আর কতটুকুই বা উন্নতি করতে পারে . যাইহোক আমাদের উদ্দেশ্য এভারেস্ট ছিল না, ছিল অন্নপূর্না. উচ্চতা তার ৮০৯১ মিটার. আর একটু লম্বা হলেই এভারেস্ট ছুয়ে ফেলতো . তবে অন্নপূর্না উঠবো এমন কোন সুইসাইডাল মিশন নেওয়ার ইচ্ছা শক্তি কোনটাই নেয়, তাই বেইজ ক্যাম্প ছিল ভরসা . সেই লক্ষ্যে গান্দ্রুক থেকে আমাদের ট্রেকিং শুরু হয়েছিল . অসম্ভব সুন্দর নদী, পাহাড় আর ঝুলন্ত ব্রিজ দিয়ে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা ট্রেকিং করেই বুঝলাম, আরেকটু জিম করে আসা উচিত ছিল 😞 কিন্তু অন্নপূর্ণকে দেখতেই যে হবে ? প্রথম দিনের ডেস্টিনেশন ছিল চমরং. পাহাড়ের গা ঘেসা বড় একটা গ্রাম, যেখান থেকে অনন্য সুন্দর Machapucchare কে দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়. Machapucchare ছিল পুরো ট্রেকের অন্যতম আকর্ষণ . ৭০০০ মিটারের এই পর্বতটি দেখতে একদম মাছের লেজের মতো, সবচেয়ে আইকনিক এর চুড়াটি, যেদিকে যায় চোখে পরে. যাইহোক চমরং থেকে সেকেন্ড দিন দোভান গিয়ে পৌছালাম ৫ ঘন্টা হেটে. হাটু ব্যাথা নিয়ে ঘন জংগল দিয়ে এই ৫ ঘন্টা ছিল বিভীষিকাময় . ভয়ে ছিলাম ট্রেক কন্টিনিউ করতে পারবো কিনা, তার উপর পরেরদিন ১০০০ মিটার উপর Machapucchare বেইজ ক্যাম্পে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ তো ছিলই. তবে নিজেকে অবাক করে দিয়েই সবার আগেই তৃতীয় দিনের ট্রেক শেষ করেছিলাম. সেখান থেকে আর ৭০০ মিটার পুশ দিলেই ৪১৩০ মিটার উচ্চতায় অন্নপূর্ণার বেইজ ক্যাম্প পৌঁছে যাবো . তবে আমার মতো চেংরার জন্য কঠিন ছিল কাজটা, তার উপর হাই এলটিটিউড, যেকোন মুহুর্তে অসুস্থ হয়ে যেতে পারি.
রাত তখন ৩টা. মিল্কি ওয়ের প্রতিটা তারা স্পষ্ট . ছোট ছোট পা আর ট্রেকিং পোলে ভর দিয়ে Machapucchare বেইজ ক্যাম্প থেকে হাটা ধরেছিলাম. কষ্ট হচ্ছিলো হাটতে. হাই এল্টিটিউডে দুই ঘন্টা হেটে মাথার তার ছিড়বে ছিড়বে অবস্থা. তখন ঘড়িতে ৫টা . হঠাৎ মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখি অন্নপূর্নার সামনে দাড়িয়ে আছি . সুর্যের আবছা আলোয় সে যেন তার সবটা সৌন্দর্য উজার করে দিচ্ছে. তাকিয়ে ছিলাম. দৈত্যাকার পর্বতটির সামনে নিজেকে অনেক তুচ্ছ মনে হচ্ছিলো . সুবহানআল্লাহ.
যাইহোক , ৮০০০ মিটারের পর্বত গুলো সামনে থেকে দেখার একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল, আছে . অন্নপূর্না দিয়ে শুরু করলাম

Post a Comment

Previous Post Next Post